বিনোদন

নতুন কুঁড়ির নতুন শুরু একটি ঐতিহ্যের পুনর্জন্ম

আমরা নতুন আমরা কুঁড়ি নিখিল বন নন্দনে, ওষ্ঠে রাঙা হাসির রেখা জীবন জাগে স্পন্দনে’- এমনই কথার সূচনা সংগীত দিয়েই শুরু হতো ‘নতুন কুঁড়ি’। একটা সময় শুক্রবার মানেই ছিল শিশু-কিশোরদের প্রাণের এ অনুষ্ঠান। এটি বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি রিয়েলিটি শো।

১৯৬৬ সালে পাকিস্তান টেলিভিশনে প্রথম প্রচার হয় অনুষ্ঠানটি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে মোস্তফা মনোয়ারের প্রযোজনায় আবার শুরু হয়। সেসময়ের বিটিভির আলোচিত অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠে শিশু-কিশোরদের প্রাণের মঞ্চ। এ অনুষ্ঠান থেকেই উঠে এসেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঙ্গনের অনেক শিল্পী। ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রচার হয় অনুষ্ঠানটি, এরপর বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে ২০ বছর পর আবারও শুরু হচ্ছে প্রতিভা অন্বেষনের এ আয়োজন। বিটিভিতে আবারও প্রচার হবে ‘নতুন কুঁড়ি’। দেশের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলেও তাই নতুন করে ফিরে এসেছে প্রাণচঞ্চল্য ।

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৬ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং দেশবরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোস্তফা মনোয়ারের উদ্যোগে নতুন আঙ্গিকে ‘নতুন কুঁড়ি’র যাত্রা শুরু হয়। অনুষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় কবি গোলাম মোস্তফার ‘কিশোর’ নামক কবিতার অনুপ্রেরণায়। উদ্দেশ্য ছিল-দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিভাবান শিশুদের খুঁজে বের করে জাতীয় পর্যায়ের একটি মঞ্চে তুলে আনা, যেন তারা নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠতে পারে। শিশু-কিশোরদের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানটি সূচনালগ্ন থেকেই বেশ সাড়া ফেলে। এখান থেকে উঠে আসে অনেক প্রতিভাবান শিল্পী। জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও ২০০৬ সালে বন্ধ হয়ে যায় অনুষ্ঠানটি। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে এমন আয়োজনের অনুপস্থিতি শুধু সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলেই নয়, শিশুদের মানসিক বিকাশেও একটি বড় শূন্যতা তৈরি করে। দীর্ঘ এই সময়ে জাতীয় পর্যায়ের তেমন কোনো শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে ওঠেনি, যার ফলে অনেক সম্ভাবনাময় প্রতিভা হারিয়ে গিয়েছিল নীরবে।

অন্ধকারের পরেই আলো আসে। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। ২০ বছর পর আবারও শুরু হচ্ছে নতুন কুঁড়ি। কিছুদিন আগে নতুন রূপে, আধুনিক কাঠামোয় এবং বিস্তৃত পরিকল্পনায় ‘নতুন কুঁড়ি ২০২৫’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বিভাজনের উর্ধ্বে গিয়ে আমাদের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির এ আয়োজন আগামী প্রজন্মকে সৃজনশীল করে গড়ে তুলবে। এটি একটি নতুন যুগের সূচনা।’

বিটিভির মহাপরিচালক মো. মাহবুবুল আলম নতুন কুঁড়ির এই প্রত্যাবর্তনকে একটি ‘সাংস্কৃতিক জোয়ার’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘নতুন কুঁড়ি কেবল একটি প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক আন্দোলন। এটি সারাদেশের শিশু-কিশোরদের শিল্প-সংস্কৃতির চর্চায় যুক্ত করবে, প্রযুক্তির আসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নতুন কুঁড়িকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক জটিলতায় অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়, যা ছিল খুবই দুঃখজনক। তবে এখন আমরা নতুন করে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি, যাতে এই অনুষ্ঠান নিয়মিতভাবে হয় এবং আগামীর প্রতিভাবান প্রজন্ম সামনে চলে আসে।বিটিভি জানিয়েছে, নতুন করে শুরু হতে যাওয়া নতুন কুঁড়ির আধুনিক কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে পুরো দেশকে ভাগ করা হয়েছে ১৯টি অঞ্চলে। প্রতিটি অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হবে আঞ্চলিক বাছাইপর্ব। এরপর নির্বাচিত প্রতিযোগীরা ঢাকায় এসে অংশ নেবেন চ‚ড়ান্ত পর্বে। অংশগ্রহণকারীদের বয়সভিত্তিক দুটি শাখায় ভাগ করা হয়েছেÑ‘ক’ (৬-১১ বছর) এবং ‘খ’ (১১-১৫ বছর)। প্রতিযোগিতা করা যাবে সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ে। প্রতিযোগিতার বিভাগগুলোকে আরও বিস্তৃত করা হয়েছে। এবারের বিভাগগুলো হলো- দেশাত্ববোধক গান, আধুনিক গান, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুলসংগীত, লোকসংগীত, হামদ-নাত, অভিনয়, আবৃত্তি, গল্প বলা, কৌতুক, সাধারণ নৃত্য ও উচ্চাঙ্গ নৃত্য। প্রতিটি বিভাগে থাকবে অভিজ্ঞ ও স্বনামধন্য বিচারক প্যানেল।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের প্ল্যাটফর্মের অভাবের কারণে শিশুরা বিকল্প বিনোদন ও অনলাইন নির্ভরতায় ঝুঁকছে। ‘নতুন কুঁড়ি’র পুনর্জাগরণ তাই শুধু বিনোদনের ক্ষেত্রেই নয়, বরং প্রজন্মকে সঠিক সাংস্কৃতিক চর্চায় ফিরিয়ে আনারও এক মহৎ উদ্যোগ।