সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে গৃহকর্মী আবিরনের মৃত্যু মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি।
দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আবিরনের ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে বলেও মনে করে সংস্থাটি। একইসঙ্গে আবিরনকে প্রতারণার মাধ্যমে সৌদিতে পাঠানোর সঙ্গে জড়িত এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ, আবিরনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ আট দফা সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে এ সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) সকালে মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহানা সাঈদ বিষয়টি রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন।
আট দফা সুপারিশ :
১. রিক্রুটিং লাইসেন্স ভাড়া দেওয়ার অভিযোগে এয়ারওয়ে ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে শাস্তি নিশ্চিত করা। আবিরনের জীবনের ক্ষতিপূরণ আদায় এবং প্রয়োজনে এয়ারওয়ে ইন্টারন্যাশনালের লাইসেন্স বাতিল করা।
২. নুর মোহাম্মদ ও ইকবাল নামে দুজন অন্যর লাইসেন্স ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তাদের পাঠানো কর্মীরা বিদেশে বিপদে পড়লেও কোনো ভ্রুক্ষেপ করেননি। চুক্তির বরখেলাপ করায় আবিরনের জীবনের ক্ষতিপূরণ আদায় করা প্রয়োজন। ইতিমধ্যে তাদেরকে নতুন লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত পপুলার ট্রেড, ফাস্ট সার্ভিস এবং আইনুর এর রিক্রুটিং লাইসেন্স বাতিল করা প্রয়োজন।
৩. নিয়ম বর্হিভূতভাবে অন্য এজেন্সিরর কর্মীর বর্হিগমন ছাড়পত্র করায় ফাতেমা এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসের বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
৪. দালাল মো. রবিউলের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৫. ওয়েজ ওর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের অফিস সহকারী নিপুল চন্দ্র গাইনকে অবিলম্বে বরখাস্ত এবং তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
৬. রিয়াদ দূতাবাসের মাধ্যমে আবিরনের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়, আটককৃত নির্যাতনকারীদের আদালতের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে আইনি পদক্ষেপসহ প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৭. আবিরনের বেতন ভাতাসহ সব পাওনা আদায়ের জন্য রিয়াদ দূতাবাস সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৮.বিএমইটি ইমিগ্রেশনে আবিরনকে ২ বার রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার জন্য দায়ী কর্মচারীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘কফিনে ফিরলো আবিরনের স্বপ্ন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মানবাধিকার কমিশন স্ব-প্রণোদিত হয়ে সংস্থাটির সদস্য ড. নমিতা হালদাকে দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে।
আবিরনকে নিয়ে প্রকাশিত পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪০ বছরের বেশি বয়সি আবিরন বেগম দেশে ফিরেছেন কাফনে মোড়ানো লাশ হয়ে। আবিরনের মৃত্যুসনদে মৃত্যুর কারণের জায়গায় লেখা ছিল ‘মার্ডার’ বা হত্যা।
২০১৭ সালে আবিরন সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজ করতে গিয়েছিলেন। সাত মাস পর লাশ হয়ে দেশে ফেরেন তিনি।
Comment here
You must be logged in to post a comment.