মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রতিকূল পরিবেশেও সরকারের সহযোগী হিসেবে গ্রাহকসেবা দিয়ে যাচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ ১২২২ শাখা নেটওয়ার্কের সোনালী ব্যাংক লিমিটেড।
গ্রাহকসেবা দিতে গিয়ে ইতোমধ্যে নিজেদের পাঁচ কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবু থেমে থাকেনি ব্যাংকিং সেবা। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও রয়েছে এর অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা। এর পাশাপাশি গ্রাহকসেবায় ব্যাংকটির ডেভিড ও ক্রেডিট কার্ড মাধ্যমে দেশের কোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সুযোগ।
করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান হিসেবে সোয়া কোটি টাকা জমা দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা বাস্তবায়নে সবার আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে চলতি মূলধন হিসেবে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করেছে ব্যাংকটি। এছাড়া সরকারের সামাজিক কর্মসূচিকে আরও এগিয়ে নিতে বিভিন্ন শিল্প, কৃষি, ব্যবসা ও বাণিজ্য খাতে আর্থিক প্রণোদনার জন্য আবেদন প্রস্তাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
ব্যাংকের সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের সব কার্মকাণ্ডে আমরা রয়েছি। প্রণোদনা ঘোষণার পরপরই আমরাই প্রথম বিমান বাংলাদেশকে এক হাজার কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করেছি। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে সব নির্দেশনা পাই আমরা সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে পালন করার চেষ্ট করি।
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহক যাতে অহেতুক হয়রানি না হয়, যেন কিছুতেই বিরক্ত অনুভব না করেন, সেই ধরনের সেবা দিতে। আমাদের এক হাজার ২২২টি শাখায় অনলাইন সেবা চালু রয়েছে। এটা আমাদের একটি ইতিবাচক দিক। গ্রাহকসেবা দিতে গিয়ে ইতোমধ্যে আমাদের কয়েকজন কর্মকর্তারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সম্মানিত গ্রাহকদের প্রতি আহ্বান থাকবে করোনাভাইরাসে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় গ্রাহকসেবায় শিগগিরিই ব্যাংকের মনিটরিং টিম গঠন করা হবে। অচিরেই চালু হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা।
ব্যাংক সূত্রে আরো জানা যায়, জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনার প্যাকেজ বাস্তবায়নে সোনালী ব্যাংক সংকটকালেও গুরুত্বপূর্ণ আরও পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ডব্লিউএইচওর স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমনকি গ্রাহকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা দেওয়া হচ্ছে। লকডাউনের শুরু থেকেই ব্যাংক কর্মকর্তাদের মাস্ক, হ্যান্ডস্যানিটাইজারসহ করোনা প্রতিরোধে জীবানুনাশক দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা কর্মীদেরও একই ধরনের সুবিধার আওতায় আনার পাশাপাশি গ্রাহকদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়ে প্রবেশমুখে সাবান ও পানি রাখা হয়েছে সবার হাতা ধোয়ার জন্য। আছে থার্মাল স্ক্যানার। গ্রাহকের সঞ্চয়ী হিসাবের কিস্তি, ঋণের কিস্তি কিংবা বিদ্যুৎসহ যে কোনো বিলের অর্থ জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব জরিমানা মওকুফ করা হয়েছে। আক্রান্তদের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ ব্যাংক বহন করছে। এছাড়াও পাচ্ছেন পাঁচ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবিমা। সেক্ষেত্রে করোনা আক্রান্তরা ৫ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত এককালীন পেতে পারে।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, সোনালী ব্যাংকের রয়েছে শক্তিশালী অনলাইন ব্যবস্থা। গ্রাহক চাইলে যে কোনো শাখা থেকে টাকা জমা দেওয়া কিংবা টাকা তুলতে পারে। এছাড়া এটিএম সেবাও রয়েছে। ব্যাংকের এটিএম কার্ড দিয়ে দেশের যে কোনো এটিএম বুথ থেকে খুবই অল্প খরচে টাকা তুলতে পারবে।
১৯৭২ সালে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ব্যাংক অব বাহ্ওয়ালপুর এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক নিয়ে ‘সোনালী ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৭ সালে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু। বর্তমানে ব্যাংকটিতে কর্মীসংখ্যা প্রায় ২২ হাজার।
Comment here
You must be logged in to post a comment.