নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত সিলেবাস সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় ১১ মাস বন্ধ আছে শ্রেণিকার্যক্রম। আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ শ্রেণিকার্যক্রম শুরুর সম্ভাবনা আছে। দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে তাদের এ সিলেবাস তৈরি করে সরকার। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে প্রতিটি বিষয়ে পাঠ গড়ে ২৫-৩০ শতাংশ কমানো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হতো। এখন জুনের প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহ নাগাদ এইচএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাসও প্রকাশ করা হবে। তাদের ক্ষেত্রেও পাঠ গড়ে ২৫ শতাংশ কমানো হতে পারে। জুলাই-আগস্টের দিকে তাদের পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা আছে সরকারের। সাধারণত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে। পাশাপাশি আগামী সপ্তাহে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও ‘শিখন ঘাটতি’ পূরণে তৈরি করা সংক্ষিপ্ত সিলেবাস এবং শিক্ষক নির্দেশিকাও প্রকাশ করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বিগত একটি বছর এসব শিক্ষার্থী ক্লাসরুমে যেতে পারেনি। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরের বছরের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় আগের বছরের পাঠ্যবইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ থাকছে। এ সিলেবাসের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রিম্যাডিয়াল প্যাকেজ’।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ‘কাস্টমাইজড’ (প্রয়োজনের আলোকে নির্দিষ্ট) সিলেবাসে ২৫-৩০ শতাংশ পাঠ কমেছে। পাঠ কমানোর ক্ষেত্রে শিখন ফল বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। লেখাপড়ার ধারাবাহিকতার জন্য যে অংশটি এ পর্যায়ে পড়া জরুরি এবং ডিগ্রি অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে (এই স্তরে) যা অবশ্য পড়তে হবে বা দক্ষতা অর্জন করতে হবে, সেটা রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এইচএসসির কাস্টমাইজড সিলেবাস এবং শিখন ঘাটতি পূরণে নির্ধারিত সিলেবাসও প্রস্তুতের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আগের বছরের পাঠ্যবই প্রায় সারা বছরই পড়তে হবে। তাদের জন্য অপরিহার্য পাঠ্য চিহ্নিত করা হয়েছে। যে অংশ এখন না পড়লে নতুন পাঠ বুঝবে না এবং বয়স ও শ্রেণি অনুযায়ী যা আনুষ্ঠানিক ও সরাসরি পদ্ধতির পাঠে শেখানো যায়নি সেটাই থাকছে এ প্যাকেজে। তাই শিক্ষার্থীদের আগের বছরের পাঠ্যবই সংরক্ষণ করতে হবে। শিক্ষককে বলে দেওয়া হচ্ছে তারা বইয়ের কোন অংশ পরের বছরের কোন পাঠের আগে পড়িয়ে নেবেন। এ ঘাটতি পূরণের পাঠদানে শিক্ষক মনে করলে শিক্ষার্থীকে আগের বছরের পাঠ্যবই স্কুলে নিয়ে আসতে বলবেন। তবে শিক্ষার্থী স্কুলে বই না আনলেও তাকে বাসায় পড়তে হবে। আর পাঠদানে শিক্ষককে অবশ্যই আগের বছরের বই সামনে রাখতে হবে।
জানা গেছে, সোমবার প্রকাশিত এসএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরির পর অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায় এনসিটিবি। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে তা প্রকাশের জন্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়। এরপর বোর্ড তা ওয়েবসাইটে (www.dhakaeducationboard.gov.bd) প্রকাশ করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকদের এটি অনুসরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম আমিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, করোনায় সংক্রমণের হার নিুমুখী। সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে ৪ ফেব্রুয়ারির পর খোলার ঘোষণা আসতে পারে। তখন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়মিত শ্রেণিকাজ হতে পারে। তা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন না খুললেও এসব পরীক্ষার্থীর লেখাপড়ার বিষয় আছে। বছরের মাঝামাঝি সরকারের পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা আছে। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা এবং শ্রেণিকার্যক্রমে যুক্ত হতে না পারার বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। কোন বিষয়ে কোন অধ্যয়ের কী পড়তে হবে, তা বিস্তারিত উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেছেন, করোনা সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ পেলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে না পারলে দ্বিতীয় সপ্তাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। তখন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে ৫-৬ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনা হবে।
Comment here
You must be logged in to post a comment.