খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ৮৫ শয্যার করোনা ডেডিকেডেট হাসপাতালের অবস্থান। বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) প্রথমবারের মতো এই হাসপাতালের সবগুলো বেড রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে হাসপাতালের ফটকে শোভা পাচ্ছে- ‘বিছানা খালি নাই’ লেখা ব্যানার। যেটি ঝুলিয়েছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক।
এদিকে, করোনা হাসপাতাল রোগীতে পূর্ণ হওয়া এবং সরকারি-বেসরকারি অন্য কোনো হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন ভর্তি হতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
করোনা হাসপাতাল থেকে তাদের জানানো হয়, কোনো রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গেলে বেড খালি হবে। তবে সহসাই সেই সম্ভাবনা নেই। তাই বেড খালি হওয়ার জন্য এখন রোগীর ‘মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা’ করতে হচ্ছে ভর্তিচ্ছুদের।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সী মো. রেজা সেকেন্দার নিজেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা হাসপাতালে ৮৫টি এবং খুমেক হাসপাতালের ফ্লু কর্নারের করোনা ওয়ার্ডে ১৫টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়। বৃহস্পতিবার করোনা হাসপাতালের ৮৫টি বেড পূর্ণ হয়ে যায় এবং ফ্লু কর্নারে আছে ১৩ জন রোগী।
করোনা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন বলেন, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে- ভর্তি হওয়ার জন্য এখন চিকিৎসাধীন রোগীর মৃত্যুর জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, জেলা সিভিল সার্জন অফিস খাতা-কলমে জেনারেল হাসপাতালে স্পেস তৈরি করে রেখেছে এক মাস হলো। অথচ এখনও পর্যন্ত একজন রোগীও সেখানে ভর্তি করা যায়নি। সিভিল সার্জনকে ফোন দিলে তিনি বলেন- করোনা হাসপাতাল ব্যবস্থা করবে।
এদিকে, করোনা হাসপাতালে সিট খালি না থাকার কারণে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে পজিটিভ রোগীরাও চিকিৎসা নিচ্ছেন। অথচ ফ্লু কর্নারে শুধু উপসর্গের রোগীদের থাকার কথা।
এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালও করোনা চিকিৎসার বিষয়ে এখনো প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে। সব মিলিয়ে সংকট গভীর হচ্ছে।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মুন্সি রেজা সেকেন্দার এ প্রতিবেদককে বলেন, জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃক জেনারেল হাসপাতালে ৪০টি শষ্যা এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৫০টি শয্যা চালুর নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে।
এ অবস্থায় ভর্তি হতে না পেরে রোগীগুলো কি রাস্তায় মারা যাবে- হতাশার সুরে নিজেই প্রশ্ন করেন পরিচালক।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনের চতুর্থ তলায় করোনা ইউনিট চালুর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। সেখানে এখন অক্সিজেন প্লান্ট এবং সেন্ট্রাল গ্যাস পাইপ লাইন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে। এ সব কাজ শেষ করতে এখনো দেড় মাস লাগবে বলে জানান তিনি।
বেসরকারি হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালুর বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, প্রাথমিকভাবে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০টি এবং ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালে ৩০টি শষ্যা চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়। তারা প্রস্তুতিও শুরু করেছে। পরে সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আদ্বদীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও করোনা ইউনিট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ৪০টি শয্যা এবং বেসরকারি হাসপাতালে (৫০ শয্যার ওপরে) করোনা ইউনিট চালুর জন্য সরকার গত ২৪ মে নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু প্রায় দেড় মাস পার হতে গেলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
Comment here
You must be logged in to post a comment.