ফুল থেকে গুটিতে পরিণত হওয়ার সময় শিলাবৃষ্টি। লিচু পাকার আগেই আম্পানের তাণ্ডব। এর আগে থেকে তো লকডাউনের কারণে ছিল পরিবহন সংকট। সব মিলিয়ে লিচু বাজারজাত ও দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন ‘লিচুর রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত ঈশ্বরদীর চাষিরা। কিন্তু বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় শঙ্কার বদলে চাষিদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে দেশি, বোম্বাই ও চায়না-৩ জাতের লিচুর আবাদ হয়েছিল।
উপজেলার বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, ফাল্গুনে লিচুর ফুল ফোটে আর চৈত্রে গুটি আসে। বৈশাখের মাঝামাঝি লিচুতে রঙ ধরতে শুরু করে। জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহে লিচুর রঙে রঙিন হয়ে ওঠে ঈশ্বরদী। বাগানে ফুল ফুটলেই বেচাকেনা শুরু হয়। লিচু যত বড় হয় দাম তত বেশি। কয়েক ধাপে হাত বদল হয়ে চলে বেচাকেনা। এবারে করোরার কারণে মৌসুমের শুরুতেই বেচা-কেনায় বিড়ম্বনা তৈরি হয়। ব্যাপারীরা আসতে না পারায় অধিকাংশ বাগান অবিক্রিত থাকে। এতে মৌসুমের শুরু থেকেই লিচু নিয়ে বিপাকে পড়েন চাষিরা। শেষ পর্যন্ত সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল শুরু এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও অফিস-আদালত খুলে যাওয়ায় লিচু বিক্রিতে তেমন বেগ পেতে হয়নি চাষিদের। মিলেছে ভালো দাম। ফলে দুর্যোগ কিছুটা ক্ষতি হলেও ভালো দামে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, পাবনা জেলা সদর থেকে ঈশ্বরদীর পাকশী সড়ক ধরে যত দূর এগুনো যায় পুরোটা জুড়ে শুধু লিচুর বাগান। এখন পুরোদমে চলছে লিচু বিকিকিনি। উপজেলার ছলিমপুর, জয়নগর, আওতাপাড়া, সাহাপুর, দাশুড়িয়া মোড়ে। ট্রাক ও ভ্যানে লিচু যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।
কয়েকজন বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হলেও বর্তমানে বাজারে চাহিদা ও ভালো দাম রয়েছে। বাগানেই প্রতি ১০০ লিচু ১৮০ টাকা থেকে ২২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে এই লিচু ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
ছলিমপুর গ্রামের বাগান মালিক কিতাব মন্ডল জানান, তিনি প্রায় ৬০ বিঘা জমিতে লিছু আবাদ করেন। গত মৌসুমে এসব জমির বাগান থেকে প্রায় ৩৫ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করেছিলেন। চলতি মৌসুমে বাগানের ৪৫ শতাংশ লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এবার তিনি অর্ধেক দাম পেয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত নুরুন্নাহার বেগম বলেন, করোনার পরিস্থিতিতে কীভাবে লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করবেন তা নিয়ে প্রথমে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। সরকার অনলাইনে ফল বিক্রির সুবিধা করে দিলো। ট্রেনে বিশেষ বগি লাগিয়ে অল্প ভাড়ায় আম-লিচু পরিবহনের ব্যবস্থা করায় তাদের ক্ষতি কম হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহমুদা মোতমাইন্না বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে লিচুর কিছুটা ক্ষতি হয়েছে এটা ঠিক। তবে গত বছরের চেয়ে এবার লিচুর দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় খুশি চাষিরা।’
Comment here
You must be logged in to post a comment.