বৈশাখের ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে মশার প্রকোপ।
বর্ষার শুরুতে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার মাত্রা বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। ঠিক এই সময়ে ডেঙ্গু মশা নিধনে কী পদক্ষেপ নিচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন?
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, সব ধরনের মশক নিধনে রুটিন ওয়ার্ক করে যাচ্ছে তারা। পাশাপাশি এডিস মশা নিধনে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, লার্ভাসাইড প্রয়োগ করা হচ্ছে নিয়মিত। এছাড়া বছরের শুরু থেকে নগরবাসীকে ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা কার্যক্রমও চলছে।
এডিস মশা নির্মূলে ১০ মে থেকে চিরুণী অভিযান চালাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। সংস্থাটি বিনামূল্যে নগরবাসীকে ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করানোর সুযোগের পাশাপাশি এডিস মশার উৎসস্থল খুঁজে পেলে বাড়ির মালিক, অফিস ও স্থাপনাগুলোকে জরিমানা করবে।
সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ বছর নতুন করে কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারণ করা মশার হটস্পট নির্মূলে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বেশি। এরসঙ্গে রাজধানীর সেবা সংস্থ্যাগুলো অর্থাৎ রাজউক, ঢাকা ওয়াসা, বিআরটিএ, হাসপাতাল, মেট্রোরেল প্রকল্প কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে তারা।
এদিকে গত ২ এপ্রিল সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে ঘিরে স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
কিট বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ জুন থেকে সেপ্টম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু মশার প্রজনন ও প্রকোপ বাড়ার সময়। অর্থাৎ এ চার মাস ডেঙ্গু মৌসুম।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ বলেন, বর্ষার কারণে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এডিস মশার প্রকোপ বেশি থাকে। কারণ বৃষ্টির পানি কোথাও জমলেই সেখান থেকে এডিসের বংশবিস্তারের সম্ভবনা থাকে। ফলে বাসা, অফিস, স্থাপনাগুলোতে যেন পানি জমে না থাকে সে দিকে নজর দিতে হবে। নিয়মিত লার্ভাসাইড প্রয়োগ ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালাতে হবে।
এডিস ও কিউলেক্স মশার জন্য অপরিচ্ছন্ন খাল দায়ী উল্লেখ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ বলেন, এগুলো পরিষ্কার করার জন্য আমরা বৈঠক করেছি। ওয়াসার চেয়ারম্যান খাল পরিষ্কার করবেন বলে আশ্বস্থ করেছেন। মশা নির্মূল শুধু সিটি করপোরেশনের একার দায়িত্ব নয়। অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলো যে দায় আছে তা নিয়ে কাজ করলেই সমাধান হয়। এখন এটাকে সবার সমস্যা মনে করে কাজ করলেই সমাধান হবে।
তিনি বলেন, বছরজুড়ে নেওয়া কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, হটস্পট ধ্বংসসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। নগরজুড়ে ওষুধ প্রয়োগের পাশাপাশি এগুলো অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, বছরের শুরু থেকে আমরা পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, জনসচেতনতা তৈরি করতে কাজ করেছি। পাশাপাশি প্রতিদিন মশক নিধন কর্মীরা নগরীর অলিগলিতে ওষুধ স্পে করছেন। ওষুধ স্পে করার জন্য আগের চেয়ে সক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে।
অন্যান্য সেবাসংস্থাগুলোর সঙ্গে এ বছর এক হয়ে ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে দুই সিটি করপোরেশন দাবির সঙ্গে ভিন্নমত রয়েছে রাজধানীবাসীর। তারা বলছেন, বছরের শুরু থেকে তারা কাজ করলে বৃষ্টি নামার সঙ্গে সঙ্গে মশার প্রকোপ বাড়তো না।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আছাদুজ্জামান সোহেল বলেন, সব সময় মশার উৎপাত থাকে। এই কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় আরও বেড়েছে। লক ডাউনের কারণে বাসায় আছি। কিন্তু গত এক মাসে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখিনি।
কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা শিহাবুর রহমান বলেন, শুধু প্রতিশ্রুতি শুনি। কিন্তু মশক নিধনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। জুরাইনের বাসিন্দা জিহাদুল হকের মন্তব্যও একই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও ডেঙ্গু সন্দেহে ২৬৪টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে ১৩৩ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছে বলে নিশ্চিত করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
চলতি বছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে কন্ট্রোলরুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, বৃহস্পতিবার (৭ মে) পর্যন্ত ২৯৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২৯৭ জন সুস্থ্য হয়েছেন। একজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন; তবে তিনি ঢাকার বাইরের। এ বছর এখনো ডেঙ্গুতে কেউ মারা যাননি।
Comment here
You must be logged in to post a comment.