অর্থনিতিসর্বশেষ সংবাদ

প্রণোদনার বাইরে বেসরকারিখাতে মূলধনী ঋণে অনিশ্চয়তা

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনার আওতায় রয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের ঋণ প্যাকেজ। যার কার্যক্রম আগামী অর্থবছর জুড়েও চলবে। এর বাইরে সামনের দিনগুলোতে বেসরকারিখাতের উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে মূলধনী ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যয়ের ঘাটতি মেটাতে সরকারের অতিমাত্রার ব্যাংক নির্ভরতা এবং ঋণ বিনিয়োগে সুরক্ষার প্রশ্নে ব্যাংকগুলো বেশি বেশি ঋণ দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠার কারণে বেসরকারিখাতের ঋণে এ অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

এদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে গত চার মাস (মার্চ থেকে) ধরেই টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে দেশের ৯০ ভাগ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী বেসরকারি খাত। এর ফলে শিল্প-কারখানা ও ব্যবসাখাতে কমেছে উদ্যোক্তার কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক আয়। এ কারণে ব্যাংকগুলোতে ব্যক্তিপর্যায়ের বিভিন্ন সঞ্চয় স্কিমগুলোতেও টাকা জমার প্রবাহ যেমন কমেছে, তেমনি সিংহভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেরই ঋণের কিস্তি পরিশোধে ভাটা পড়েছে। নতুন করে আমানতও ঢুকছে কম।

এদিকে দেশে করোনা পরিস্থিতি দিনদিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর থেকে উত্তরণ ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার দিনক্ষণ সবারই অজানা। আবার স্বাভাবিক হলেও বিদ্যমান অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের রেশ টানতে হতে পারে আরও এক থেকে দুই বছর। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য টিকে থাকার বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। যেখানে ঘাটতি বাজেট ধরা হয়েছে জিডিপির ৬ শতাংশ। টাকার অংকে এর পরিমাণ ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘোষিত বাজেট বাস্তবায়ন করতে এ বিপুল পরিমাণ অর্থের যোগান (বৈদেশিক উৎস্য ৮০ হাজার ১৭ কোটি ব্যতীত) অভ্যন্তরীণ উৎস্য থেকেই সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। যেখানে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকার মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়ার লক্ষ্য ধার্য করেছে ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা।

কিন্তু দেশে অর্থনৈতিক চালচিত্র নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও ওয়াকিবহাল অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের ব্যাংকঋণ নেওয়ার সীমা আরও অনেক বেড়ে যেতে পারে। কারণ হিসেবে তারা দাবি করেছেন, এ বাজেটে ধার্যকরা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্জন সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে ঘাটতি পূরণ ও ব্যয় নির্বাহে সরকারকে ব্যাংকঋণের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। একই কারণে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া ঋণ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৮২ হাজার ৪২১ কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি করা হচ্ছে। কেননা, ইতোমধ্যেই সরকার ৭৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে ফেলেছে। ফলে অর্থবছরের চলমান কর্মকাণ্ডে ব্যয় নিষ্পত্তির জন্য আরও টাকার প্রয়োজন হবে। যার জন্য অর্থ পাওয়ার সহজ পথ এ ব্যাংক ব্যবস্থাই।

এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ রাইজিংবিডিকে বলেন, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ২৫.৩ শতাংশ ধরা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। যাতে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতার বাইরে অন্যান্য ঋণও সহজ শর্তে পেতে পারেন। এক্ষেত্রে সরকার যতই ঋণ গ্রহণ করুক না কেন, তাতে বেসরকারিখাতে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়। এজন্য ব্যাংকগুলোতে অর্থের যোগান বাড়াতে অনাদায়ী খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যকর পরিকল্পনা থাকা দরকার। এ বিষয়ে সম্ভাব্য সংকট উত্তরণে তিনি অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও সাবেক বিশিষ্ট ব্যাংকারদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী আর্থিক খাত পরামর্শক কমিটি গঠন করারও কথা বলেন।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ এ প্রসঙ্গে দাবি করেন, ঘাটতি পূরণে অতিমাত্রার ব্যাংকনির্ভরতার কারণে বেসরকারি খাত চাপে থাকবে। তিনি এ আশঙ্কা মোকাবিলায় নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য মূলধনী ঋণে বিশেষ স্কিম গ্রহণ করার তাগিদ দেন।

তবে প্রণোদনা প্যাকেজের বাইরে বেসরকারিখাতে ঋণ পাওয়ার জন্য ব্যাংক ব্যবস্থাকেন্দ্রিক কোনোরকম অনিশ্চয়তা তৈরি হবে না বলে জোরালোভাবে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বাজেটোত্তর ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে জানান, ব্যাংকিংখাতে এ মুহূর্তে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। রিজার্ভে রয়েছে আরও ৬২ হাজার কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকখাতে তারল্যে কোনো সমস্যা তৈরি হবে না। ফলে বেসরকারিখাতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।

Comment here