সোমবার (১৫জুন) ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রশ্ন রেখে বলেন করোনা ভাইরাস মতো দুর্যোগের সময় এন-৯৫ মাস্কসহ বিভিন্ন পণ্য কেনায় কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পৃক্ত দু্র্নীতিবাজরা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী কিনা ?
করোনা সংক্রমণের শততম দিন উল্লেখ খরে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকারের প্রয়াস ছিল তা মানতে হবে। এই সমস্যাকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণার পর সবাইকে সম্পৃক্ত করার সুযোগ ছিল, যা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায়ও এসেছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনাকালে কোনও ধরনের দুর্নীতিকে ছাড় দেবেন না। কিন্তু আমাদের পর্যবেক্ষণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পণ্য ক্রয় এবং মাঠ পর্যায়ে সরকার ও সরকারের বাইরে ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক দুর্নীতি দেখা গেছে। যারা জড়িত তারা রাজনৈতিভাবে প্রভাবশালী মহল, জনপ্রতিনিধি। যতটুকু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা নামমাত্রে। দুষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়নি।’
টিআইবির এই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সরকারি ক্রয় বিতরণ খাতে স্বচ্ছ নীতিমালা অনুসরণ করা জরুরি, যা হয়নি। যে কারণে এন-৯৫ মাস্ক ক্রয়ে কেলেঙ্কারি ঘটেছে। সেই কেলেঙ্কারি উদঘাটনে যে কমিটি গঠিত হয়েছে, তার প্রতিবেদন চাপা রাখা হয়েছে। দুর্নীতিবাজদের শাস্তির আবেদন জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘প্রকৃতিক দুর্যোগকে পুঁজি করে পরস্পর যোগসাজশে সম্পদ বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। শুরু থেকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতি বিরোধী ঘোষণার সঙ্গে এটা সাংঘর্ষিক। এ ধরনের দুর্নীতির বিচার না হওয়ার কারণে আমাদের ভাবতে হচ্ছে তাদের মধ্যে কি এমন কোনও সুবিধাবাদী রয়েছে যারা প্রধামন্ত্রীর চেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী? এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক জানান, করোনা বিষয়ক কার্যক্রমে সুশাসনের যে সাতটি সূচক রয়েছে তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য ঘাটতি ছিল। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিব্রতকর ঘাটতি ছিল। এক্ষেত্রে নাগরিক সমাজ কিংবা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আসা পরামর্শ খুব বেশি আমলে নেওয়া হয়নি। বিভ্রান্তিকর ও পরস্পর বিরোধী পদক্ষেপ ছিল। প্রথম দেড় মাসে সরকারের অনেক পর্যায় থেকে আত্মতুষ্টিতে থাকার প্রমাণ মিলেছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেছেন, ‘সামাজিক দূরত্ব যথাযথ রাখতে ঘোষিত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সরকারের উদ্যোগের ঘাটতি ছিল। জীবন ও জীবিকার দ্বন্দ্ব ছিল। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিকল্পনা ছিল না। বিশেষ করে পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে এরূপ চিত্র দেখা গেছে। একবার চালু করা, বন্ধ করে আবার চালু করা। অর্থনীতির কার্যক্রম চালুর অজুহাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে স্বাস্থ্যবিধি লংঘন করা হয়েছে। এসময় মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে ব্যাপকভাবে। সাংবাদিকদের হয়রানি করা হয়েছে। আইসিটি আইনে মামলা ও গ্রেপ্তার হয়েছে। এমনকি পেশাজীবী ডাক্তার কিংবা অন্যদের হয়রানির স্বীকার হতে হয়েছে।’
টিআইবি ৩৮টি জেলা ও ৪৭টি হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার বিষয়টি এবং ৪৬টি জেলার ত্রাণ বিতরণের ওপর গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করে। প্রতিবেদনে সংস্থাটি ১৫টি সুপারিশ দিয়ে তা বিবেচনার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছে।
Comment here
You must be logged in to post a comment.