জাতীয়রাজনীতি

‘জুলাই সনদে সই নাও করতে পারে এনসিপি’

ইসিতে আবেদন, ৩ প্রতীক চাইল এনসিপি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এক দফার ঘোষক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষিত মৌলিক সংস্কার জুলাই সনদে প্রতিফলিত না হলে তাতে স্বাক্ষর নাও করতে পারে এনসিপি।গতকাল শুক্রবার দলের ষষ্ঠ সাধারণ সভায় এসব কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক। সভায় এনসিপির গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয়, যা রোববার নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধনের আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া হবে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, এখন থেকেই ক্ষমতাকেন্দ্রিক নয়, বরং রাষ্ট্র কাঠামো বদলাতে রাজপথে সরব হওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। এর অংশ হিসেবে দলের নিবন্ধনের পর গণঅভ্যুত্থানের বার্ষিকী সামনে রেখে জুলাই-আগস্টের কর্মসূচি পালন করা হবে।

এনসিপির একাধিক সূত্র জানায়, সাধারণ সভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর তারা একটি প্রেশার গ্রুপ হিসেবে থাকতে চেয়েছিলেন। তারা রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাননি। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর জুলাই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কম্প্রোমাইজ (আপস) করার কারণে গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ করার জন্য এনসিপি গঠন করতে হয়েছে। সংসদের আসনের জন্য রাজনীতি করতে আসেননি, রাষ্ট্র কাঠামো বদলাতে রাজনীতিতে এসেছেন তারা। নতুন বন্দোবস্তের এ রাজনীতিই করবে এনসিপি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুত জুলাই সনদে মৌলিক সংস্কার প্রতিফলিত না হলে ওই সনদে এনসিপি স্বাক্ষর নাও করতে পারে।

সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্রের আলোচনায় এনসিপির যে কেউ সর্বোচ্চ কতবার সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হতে পারবেন, সেটি উঠলে বেশিরভাগই মত দেন তিনবারের পক্ষে। পরপর দুবার কাউন্সিলের মাধ্যমে হয়ে এক বা দুবার বিরতি রেখে তৃতীয়বার শীর্ষপদে আসীন হতে পারবেন—সে মতও আসে। সে সময় নাহিদ ইসলাম বলেন, আমি মনে করি তিনবার সভাপতি হওয়ার সময়কালটা অনেক লম্বা। ফলে দলের ভেতরে ব্যালান্স অব পাওয়ার বজায় থাকতে দুবার হওয়াটাই যৌক্তিক।

শীর্ষ দুই পদে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার

বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাধারণ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। এ সময় সভার সিদ্ধান্তগুলো জানিয়ে তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে আবেদন করার সময় জাতির কাছে প্রকাশ করব। পরে দলের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সভার সিদ্ধান্তগুলো উল্লেখ করা হয়।

এনসিপির গঠনতন্ত্রে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সারা দেশের কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচন এবং একজন জীবনে সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালনের বিধান রাখা হয়েছে। তারা জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত ‘রাজনৈতিক পরিষদ’-এর কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। এ ছাড়া দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ হবে তিন বছর এবং মেয়াদের শেষ ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে গঠনতন্ত্রে।

গতকাল এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাতের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গৃহীত গঠনতন্ত্র আগামী কাউন্সিলের আগ পর্যন্ত প্রয়োজনসাপেক্ষে সংশোধন করতে পারবে প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কমিটি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনসিপির রাজনৈতিক পরিষদ ন্যাশনাল কাউন্সিলের ভোটে নির্বাচিত হবে। এ পরিষদ সর্বনিম্ন ১১ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ সদস্যবিশিষ্ট হবে। ১১ জন সদস্য কাউন্সিলের ভোটে নির্বাচিত হবেন, যার মধ্যে ন্যূনতম তিনজন নারী সদস্য থাকতে হবে। পদাধিকারবলে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রাজনৈতিক পর্ষদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। এ পর্ষদের বাকি দুই সদস্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে মনোনীত হবেন।

এতে জানানো হয়, তাদের একটি ন্যাশনাল কাউন্সিল থাকবে। এ ফোরাম রাজনৈতিক পরিষদ নির্বাচন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন এবং জরুরি সময়ে কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার দায়িত্ব পালন করবে। ন্যাশনাল কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটি, অঙ্গসংগঠনের নির্বাহী কমিটি, জেলা পদমর্যাদার কমিটি থেকে পাঁচজন এবং উপজেলা পদমর্যাদার কমিটি থেকে দুজন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে।

এ ছাড়া এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটি সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলী, অন্যান্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক সাধারণ সদস্য এবং ক্ষেত্রবিশেষ জেলা সভাপতির সমন্বয়ে গঠিত হবে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনসিপির নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন দাখিলের বিষয়ে সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দলের নিবন্ধনসংক্রান্ত বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সামগ্রিক যোগাযোগের জন্য দলের পক্ষ থেকে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসাকে সিদ্ধান্তু অনুযায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এনসিপির নেতারা জানিয়েছেন, আগামী রোববার নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হবে। এজন্য আরপিও অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব শর্ত ইতোমধ্যে পূরণ করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে এনসিপি নেতা সারজিস আলম বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও আচরণ তাদের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে আমাদের বাধ্য করেছে। তাদের আচরণ স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আগামীতেও আমরা পর্যবেক্ষণ করব এবং অন্য কোনো পন্থা বেছে নেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা যে প্রশ্নগুলো তুলেছি, সে প্রশ্ন এখনো আমাদের আছে। পরবর্তীতে যদি কেউ স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়, তাদের বিরুদ্ধেও প্রশ্ন করব।