মো.নিয়ামুল হাসান নিয়াজঃ
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের এই সময় বিভিন্ন চায়ের দোকানগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে চা বিক্রি। তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাব পরেছে ওইসব চায়ের দোকানগুলোতে। কাস্টমারের অভাবে অনেকটাই কমে গেছে চায়ের কাপের সুপরিচিত সেই টুংটাং শব্দ।
তাই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দোকানগুলোতে কাচের কাপ বা গ্লাসের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে ডিসপোজেবল (প্লাস্টিক ও কাগজের তৈরি)বা অন-টাইম কাপ। দোকানির আয়োজনের পাশাপাশি এই কাপের প্রতি আগ্রহ রয়েছে কাস্টমারদেরও। তারা মনে করেন করোনাভাইরাস থেকে দূরে থাকতে ওয়ানটাইম কাপের বিকল্প নেই। ক্রেতা-বিক্রেতাদের ধারণা এমনটি হলেও বাস্তবটা ভিন্ন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ওয়ানটাইম কাপ মানবদেহের জন্য ডেকে আনতে পারে মহাবিপদ।
আর ফুটন্ত গরম পানিতে ধোয়া কাচের গ্লসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে বাহিরের দোকানে চা পান না করাটাই উত্তম বলে পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সরেজমিনে ঢাকার মতিঝিল, বসুন্ধরা, উত্তরা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সবখানের চায়ের দোকানে ব্যবহার হচ্ছে ডিসপোজেবল কাপ। দোকানিরা মাস্ক পরে ব্যবসা চালাচ্ছেন। তাদের এমন সচেতনতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। কোথাও অবশ্য কাচের কাপে এখনও চা কেনাবেচা চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ রোধে জীবাণু ধ্বংসের জন্য অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে ধুয়ে তারপর কাপ গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে এসব কাপে চা পানের কারণে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। করোনা ভাইরাসের বিস্তাররোধে দুই মাসেরও বেশি সময় সাধারণ ছুটি ছিল দেশে। তখন ফার্মেসি, কাঁচাবাজার ও মুদি দোকান ছাড়া সবকিছুই বন্ধ ছিলো। গত ৩১ মে সাধারণ ছুটি শেষে ঢাকার বেশিরভাগ গলি ও ফুটপাতের চায়ের দোকানগুলো ফের জমে উঠেছে। তবে ডিসপোজেবল কাপ না হলে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
উত্তরার বিমানবন্দর এলাকার চা বিক্রেতা সিরাজ উদ্দিন বলেন, আগে কাচের কাপে চা বিক্রি করতাম। সেগুলো রেখে দিয়েছি, করোনা ভাইরাস মহামারীর চলে গেলে আবারও এসব কাপ ব্যবহার করবো। এখন ওয়ানটাইম কাপে চা বিক্রি করছি। শুক্রবার সকালে উত্তরার আজমপুর এলাকার আরেক চা বিক্রেতা সেন্টু ও রিয়াজ বলেন, ওয়ানটাইম কাপে চা বিক্রি করছি কয়েকদিন হলো। এজন্য প্রতি কাপ চায়ের দাম দুই টাকা বাড়াতে হয়েছে। বর্তমানে প্রতি কাপ চা আট টাকা নিচ্ছি। ডিসপোজেবল কাপ কেনার কারণে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। চা বিক্রেতাদের দাবি, কাপ ভালোভাবে গরম পানিতে ধুয়ে তারপর চা পরিবেশন করা হচ্ছে। ফলে এতে জীবাণু থাকার কথা নয়।
ফুটপাতের চায়ের দোকানে কাচের কাপ বা ডিসপোজেবল কাপে করোনাভাইরাস ছড়ায় কিনা সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাঃ হামিদুর রহমান বলেন, গরম পানি ও ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে কতোক্ষণ কাচের কাপটি পরিস্কার করা হচ্ছে তারওপর নির্ভর করে জীবাণু গেলো নাকি থাকলো। তাছাড়া শুধু গরম পানিতে কাপ পরিস্কার করলেই করোনার জীবাণু মরবে না। করোনার জীবাণু মারতে হলে প্রতিবার ব্যবহারের পরে কাচের কাপটি প্রথমে ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড পরিস্কার করে তারপর গরম পানিতে যদি কাপ মিনিট খানেক সময় রাখা যায়, তাহলে ভাইরাস নষ্ট হয়ে যাবে। কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডতো রাখতেই হবে। যদি তা না করা হয় তবে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়।
তিনি আরও বলেন, ওয়ান টাইম কাপ মানবদেহের জন্য নিরাপদ নয়। কারণ তা ব্যবহারের পূর্বে ধোয়া হয়না। এছাড়া কাপগুলো কিসের মধ্যে রাখা হচ্ছে তারওপর নির্ভর করে জীবাণুর সংক্রমণ হবে কিনা। যদি ঢাকনাসহ কোনও বাক্সে রাখা হয়, তাহলে তা নিরাপদ থাকতে পারে। আর খোলা অবস্থায় থাকলে সংক্রমণ হওয়ার বিপদ থেকেই যাচ্ছে। কারণ কাপের আশেপাশে কেউ হাঁচি-কাশি দিলে এবং সেই ব্যক্তি যদি করোনা পজিটিভ হয় তাহলে জীবাণু থেকে যাবে। সেখান থেকে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সচেতনতার অভাবটাই বেশি। যেখানে মানুষ মারা যাচ্ছে, সেখানে চা খাওয়াটা তো জীবনের জন্য জরুরি না। প্রশাসন মানুষদের সচেতন করছে, প্রয়োজনে জরিমানা পর্যন্ত করছে। তারপরও যদি মানুষ অসচেতন হয়, তাহলে আর কী করবে তারা।’
Comment here
You must be logged in to post a comment.