গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ধর্মীয় নেতাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইরাকের জনগণ বিশাল সমাবেশে অংশ নিয়েছে। দেশটির ধর্মীয় নেতারা জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে যেকোনো ধরনের সহিংসতার বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু তারপরও অত্যন্ত পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি বিশেষ মহল গত দুই মাস ধরে ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে এবং তাদের ব্যাপারে অবমাননাকর তৎপরতা চালাচ্ছে।
ধর্মীয় নেতাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে জনগণের বিশাল র্যালি বের হওয়ার পর মুখোশ পরিহিত একদল সশস্ত্র ব্যক্তির হামলায় সাধারণ মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এবার নাজাফে অবস্থিত মোক্তাদা সাদরের এলাকায় হামলা হয়েছে। বলা হচ্ছে ড্রোনের সাহায্যে এ হামলা চালানো হয়েছে যা খুবই বিস্ময়কর। এসব পরিকল্পিত সহিংসতা ও ধর্মীয় নেতাদের অবস্থানে হামলার ঘটনার একই সময়ে আমেরিকা ইরাকের জনপ্রিয় স্বেচ্ছাসেবী হাশদ আশ্ শাবি সংগঠনের তিনজন নেতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
পর্যবেক্ষকরা ইরাকের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে কয়েকটি দিক থেকে মূল্যায়ন করেছেন। প্রথমত, শত্রুদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে, ইরাকের প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলো যাতে শান্তিতে থাকতে না পারে। কারণ তারা জানে হাশদ আশ্ শাবির মতো জনপ্রিয় সংগঠনগুলো যদি শক্তিশালী ও স্থির হতে পারে তাহলে ইরাকে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। ইরাকে এমন সময় নতুন করে সহিংস ঘটনা ঘটল যখন বিক্ষোভ শুরুর আগে ইরাকের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা সিস্তানি দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে সবাইকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। রাজধানী বাগদাদে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা থেকে বোঝা যায় দেশের ভেতরে ও বাইরের কুচক্রি মহল চায় না ইরাকে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক।
শত্রুরা বিশেষ করে আমেরিকার দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইরাকের প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোকে দুর্বল করার পাশাপাশি দেশটির ধর্মীয় নেতাদের মর্যাদাকে ভুলুণ্ঠিত করা। মার্কিন অর্থমন্ত্রণালয় ইরাকের চারজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যাদের মধ্যে হাশদ আশ্ শাবির তিনজন নেতা রয়েছেন। কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে ওই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
আমেরিকা এমন সময় এ নিষেধাজ্ঞা দিল যখন একদিকে ইরাকে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ ও গোলযোগ চলছে অন্যদিকে দেশটি আইএস সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় আমেরিকা কখনোই চায় না ইরাকে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক বরং তারা ইরাককে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য নতুন নতুন ষড়যন্ত্র আটছে।
প্রতিরোধকামীদেরকে দুর্বল করা এবং ধর্মীয় নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পেছনে আমেরিকার তৃতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইরাকের বর্তমান শাসন কাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে আমেরিকার ইচ্ছামতো নতুন শাসন কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা। নতুন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোকে আমেরিকা এমনভাব ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছে যেখানে হাশদ আশ্ শাবির মতো ইসলামি সংগঠনগুলো যাতে কোনো প্রভাব খাটাতে না পারে এবং তাদের পরিবর্তে যাতে ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠনগুলো ক্ষমতা দখল করে নিতে পারে। অর্থাৎ ইরাকের রাজনীতি ও প্রশাসনে যাতে ধর্মীয় নেতাদের কোনো স্থান না থাকে। এ কারণেই উত্তেজনা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা দিলেও সহিংসতার অবসান তো ঘটেইনি বরং ইরাকের সরকার কাঠামোকে ধ্বংস করার জন্য নতুন করে সহিংসতা চালানো হয়েছে।