রাশিয়া বলেছে, পরমাণু সমঝোতা স্থায়ীভাবে মেনে চলতে ইরানকে বাধ্য করা যাবে না। আমেরিকার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইউরোপের দেশগুলো পরমাণু সমঝোতা স্থায়ীভাবে মেনে চলতে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করার পর রাশিয়া এ প্রতিক্রিয়া জানাল।
ভিয়েনায় নিযুক্ত রুশ প্রতিনিধি মিখাইল উলিয়ানোভ পরমাণু সমঝোতাকে ইরানের জন্য স্থায়ী করার প্রচেষ্টার ব্যাপারে বলেছেন, “আন্তর্জাতিক আইন এবং পরমাণু সমঝোতার ধারা অনুসারে পরমাণু ক্ষেত্রে ইরানের অধিকারকে নিশ্চিত করা হয়েছে।”
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের ধরন কেমন হবে তা পরমাণু সমঝোতায় স্পষ্ট করা আছে। আমেরিকা এবং পরমাণু সমঝোতার সমালোচক কেউ কেউ মনে করেন পরমাণু সমঝোতায় কিছু দুর্বল দিক রয়েছে এবং ইরানের জন্য যেসব সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে তা ইরানকে অবশ্যই স্থায়ীভাবে মেনে চলতে হবে।
ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি পরমাণু সমঝোতাকে অস্থায়ী চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, “মূল কথা হচ্ছে এতে ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির কোনো রকম সুযোগ দেয়া হয়নি যা কিনা স্থায়ী একটি বিষয়। তবে ইরানও কখনো পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করবে না বলে প্রতিশ্রুতিবব্ধ।” আরাকচি আরো বলন, “নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে পরমাণু সমঝোতায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে যে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে তা কেবল আস্থা সৃষ্টির জন্য। তাই কোনো দেশ সীমাবদ্ধতা কিংবা আস্থা সৃষ্টির এ প্রক্রিয়া চিরকাল মেনে চলবে এমন প্রত্যাশা করাটা ঠিক নয়।”
আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এবং ইরানের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় ইউরোপের ব্যর্থতার এক বছর পর চলতি বছর ৮মে থেকে ইরান পর্যায়ক্রমে অর্থাৎ দুই মাস পরপর পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতির কিছুকিছু ধারা বাস্তবায়ন স্থগিত রাখছে। বর্তমানে ইরান চতুর্থ পর্যায়ে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন স্থগিত রেখেছে যা এরই মধ্যে একমাস পার হয়েছে। তেহরানের এ পদক্ষেপ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। ফ্রান্সের কর্মকর্তারা ইরানের বিরুদ্ধে ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার হুমকি দিয়েছেন। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, ইউরোপীয়রা ইরানের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় ‘ইন্সটেক্স’ নাম যে প্যাকেজ প্রস্তাব দিয়েছিল সেটা তারা আজো বাস্তবায়ন করেনি। অবশ্য ওয়াশিংটনের চাপের মুখে তারা সে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন থেকে সরে আসে।
বর্তমানে ইউরোপের ছয়টি দেশ দাবি করে আসছে যে তারা ‘ইন্সটেক্স’ বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও হল্যান্ড এক যৌথ বিবৃতিতে দাবি করেছে তারা পরমাণু সমঝোতাকে পুরোপুরি সমর্থন করে এবং ‘ইন্সটেক্স’ও বাস্তবায়ন করবে। একইসঙ্গে তারা ইরানকেও পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, ইউরোপ এমন সময় ইরানকে চুক্তি মেনে চলার জন্য বলছে যখন তারা নিজেরাই আজ পর্যন্ত কোনো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি। ইরানের ব্যাপারে ইউরোপের দাবির বিষয়ে ভিয়েনায় নিযুক্ত রুশ প্রতিনিধি মিখাইল উলিয়ানোভ বলেছেন, “আমেরিকা নিজে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়েই ক্ষান্ত হয়নি অন্যান্য দেশকেও তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করছে। একইসঙ্গে পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি মেনে চলতে তেহরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।”