ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টানা ২১ দিনের বিরামহীন আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। অর্থাৎ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রকাশ্য সব ধরনের প্রচারে ইতি টানতে হবে আজই। এ ছাড়া আজ থেকে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছানো হবে নির্বাচনী মালামাল। ভোটে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে আজ মাঠে নামছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
দুই সিটির ভোটগ্রহণ শুরু হবে ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল ৮টায়। নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী, কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৩২ ঘণ্টা, ভোটগ্রহণের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা এবং ভোটগ্রহণের দিন রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ওই নির্বাচনী এলাকায় কোনো ব্যক্তি কোনো জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান করা এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা সংগঠিত বা তাতে যোগদান করতে পারবেন না। ওই সময় কোনো আক্রমণাত্মক কাজ বা বিশৃঙ্খলামূলক আচরণ করতে পারবেন না। ভোটার বা নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত বা দায়িত্ব পালনরত কোনো ব্যক্তিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না। কোনো অস্ত্র বা শক্তিও প্রদর্শন বা ব্যবহার করতে পারবেন না। এই আইন ভঙ্গ করলে ন্যূনতম ছয় মাস ও অনধিক সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।
সব কেন্দ্রে আজ চলবে ইভিএমে অনুশীলন ভোট : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোটাররা ভোটের আগের দিন নিজ কেন্দ্রে গিয়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নিজের ভোট দেওয়া অনুশীলন করতে পারবেন। ইসির ইভিএম প্রকল্পের অপারেশন প্ল্যানিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার ইনচার্জ স্কোয়াড্রন লিডার কাজী আশিকুজ্জামান এ তথ্য জানিয়েছেন। ইভিএম ও নির্বাচনের আনুষঙ্গিক মালামাল রাজধানীর আটটি ভেন্যু থেকে আজ বিতরণ করা হবে।
ব্যাপক নিরাপত্তার আয়োজন : আজ থেকে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হচ্ছে নিরাপত্তা চৌকি। ভোটারদের নিরাপত্তা আর ভোটদান নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার মিলে অর্ধলক্ষাধিক সদস্য এই নির্বাচনে মাঠে কাজ করছেন। নির্বাচনী অপরাধ দমন ও সংক্ষিপ্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মাঠে রয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। নির্বাচনের রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার আর সন্ত্রাসী, মস্তানদের আটকে পরিচালনা করছে বিশেষ অভিযান। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন থাকবে। যান চলাচল ও বহিরাগতদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসি। সিটি নির্বাচনে জনস্বার্থে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লাইসেন্সধারী অস্ত্রের মালিকদের সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রসহ চলাফেরা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ইসির নির্দেশে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
যান চলাচল বন্ধ : ঢাকার দুই সিটির ভোটকে সামনে রেখে ভোটের দিন লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও আন্তঃজেলা লঞ্চ চলতে কোনো বাধা নেই। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এই আদেশ জারি করেছে। ইসি জানিয়েছে, ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত ১২টা থেকে ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাস, বেবিট্যাক্সি/অটোরিকশা, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, ট্রাক, টেম্পো, অন্যান্য যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে ৩০ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত। তবে মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন যানবাহনে নিষেধাজ্ঞা রিটার্নিং অফিসারে অনুমতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাঁদের এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য। এ ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র থাকতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি-বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং জরুরি কাজে বিশেষ করে অ্যাম্বুল্যান্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।