বিনোদনসর্বশেষ সংবাদ

অনুদান কমিটি থেকে কেন অব্যাহতি নিলেন মম

অনুদান কমিটি থেকে কেন অব্যাহতি নিলেন মম

Zakia Bari Mamo | চঞ্চল মন আমার শোনে না কথা🥰 | Instagram

স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি বাছাই কার্যক্রমের লক্ষ‍্যে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি’র অন্যতম সদস্য হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক পেয়েছিলেন অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম। গত বছরের অক্টোবরে চলচ্চিত্র ও রাষ্ট্রের উপকারের আশায় তাতে হাসিমুখে সম্মত হয়েছিলেন অভিনেত্রী।

এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩২টি চলচ্চিত্রকে মোট ১৩ কোটি টাকা অনুদান প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, যা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ হয় চলতি বছরের ১ জুলাই। যা নিয়ে ২ জুলাই দিনভর তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলে। কারণ, খোদ অনুদান কমিটির সদস্যদেরও অনুদান দেওয়ার নজির মিলেছে এবার!

এমন ঘটনার ঠিক একদিন পরই নিশ্চিত হওয়া গেল, ওই অনুদান কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন জাকিয়া বারী মম! তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও সত্যতা নিশ্চিত করেন।

মম জানান, অনুদানের যে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে ১ জুলাই কিংবা যে সিনেমাগুলো অনুদান পাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের, সেখানে কমিটির সদস্য হিসেবে তার কোনো অংশীদারত্ব নেই। অর্থাৎ, এই নির্বাচিত চলচ্চিত্রগুলো বাছাই ও চূড়ান্তকরণে তার কোনো দায় নেই। মম বলেন, ‘আমি পদত্যাগ বেশ আগেই করেছি। ২৫ মে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। জানিয়েছি, ব্যক্তিগত ও পেশাগত কারণে আমি আর এখানে সময় দিতে পারছি না।’

অভিনেত্রী অস্বস্তি প্রকাশ করে আরো বলেন, ‘অনুদানের প্রজ্ঞাপন জারির পর বেশিরভাগ খবরে আমার নামটাও চলে আসছিল কমিটির সদস্য হিসেবে। তাছাড়া অনেকেই নানান প্রতিক্রিয়া আমাকে জানাচ্ছিলেন, যেহেতু তারা মনে করছিলেন আমি এই কমিটির সদস্য। ফলে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া আমার জন্য বেশ অস্বস্তিকর। অথচ আমি এর সঙ্গে নেই গত প্রায় এক মাস।’ অথচ রাষ্ট্রের ডাকে, চলচ্চিত্রের উন্নয়নের লক্ষ্যে, সংস্কারের আশায়, নিজের শুটিং ব্যস্ততা ফেলে রাজপথ থেকে অনুদান কমিটিতে যুক্ত হয়েছিলেন হাসিমুখে।

সেদিনই (৭ অক্টোবর) জাকিয়া বারী মম তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারার জন্য দোয়া চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি এটা আমার প্রতি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটা গুরুদায়িত্ব। সেটি আমি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে চাই। কাজটা যেন করতে পারি, আমার জন্য দোয়া করবেন সবাই।’

অথচ সেই কমিটিতে থেকে পদত্যাগ করতে হলো মমকে। স্পষ্ট ভাষায় বললেন, ‘কাজ করার সুযোগ ছিল না নিয়মের বেড়াজাল। এই অল্প সময়ের মধ্যে সংস্কার করে এত পুরাতন নিয়মকানুন সামলে পসিবল হয়ে উঠছিল না। ফলে আগের মতো করেই জিনিসটা আসলে আগাচ্ছিল। যেখানে আমার কাজ করার আগ্রহটা হারিয়ে ফেলেছি। এখানে আসলে অভিযোগের কিছু নেই। এটা আমাদের সিস্টেমের জটিলতা। সঙ্গে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তো আছেই।’

কিন্তু বিপ্লব শেষে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এবং বিভিন্ন বিষয়ে কমিটিগুলো পুনর্গঠনের মূল কারণই ছিল পুরোনো সিস্টেমে সংস্কার করা। যার ভেতর দিয়ে মানুষ সুফল ভোগ করবে; অধিকার ও ন্যায় নিশ্চিত হবে। তাহলে সরকারের ১০ মাস আর জাকিয়া বারী মমর ৭ মাসের সরকারি অভিজ্ঞতা আর অব্যাহতি কি বার্তা বহন করে? মমর ভাষায়, ‘এটাই বহন করে যে, আমি পারছি না, তাই অব্যাহতি নিলাম। যেন আমার বদলে অন্য কেউ এসে কাজটা সঠিকভাবে করতে পারেন।’

জুলাই বিপ্লবে শিল্পী অধ্যায়ে জাকিয়া বারী মম অন্যতম ফ্রন্টলাইনার ছিলেন। বরাবরই যার ভেতরে ছিল দেশাত্মবোধ। তিনি ছিলেন সংস্কারের দাবি তোলা অন্যতম অভিনেত্রী। তাহলে সংস্কারের বিপরীতে পুরোনো সিস্টেমের কাছেই পরাজিত হলেন মম? শুধুই কি পুরোনো আইনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা? মম বললেন, ‘আমি গিয়েছিলাম রাষ্ট্রের জন্য কাজ করতে। সেটা পারিনি বলেই ফিরে আসা নিজের কাছে। আর কিছু নয়।’